ঢাকা , সোমবার, ১২ মে ২০২৫ , ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
জগন্নাথপুরে সমলয়ে আবাদকৃত বোরো ধান কর্তন উৎসব কালীগঞ্জে এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক সাতাশ পর্যন্ত টাইগারদের দায়িত্ব পাচ্ছেন টেইট ক্ষমা চাইলেন রিশাদ হোসেন টেস্ট থেকে অবসর নিলেন বিরাট কোহলি কোহলির পর অবসরের ইঙ্গিত দিলেন রোহিত আইপিএল শুরু হলেও ফিরছেন না অষ্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা রিয়ালের সাথে জয় পেলো বার্সা ইয়ামালের প্রশংসায় ফ্লিক ওয়েস্টহ্যামের কাছে হারের স্বাদ পেলো ম্যানইউ অভিযোগ-দুর্নীতির তথ্য জানাতে নতুন ব্যবস্থা সহযোগী শাহরিয়ার বিপ্লব এখনও অধরা রংপুরে ২৯ হাজার গ্রাহকের ১২১ কোটি টাকা লোপাট জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিল দাবি গণঅধিকার পরিষদের নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে অনেক সময় লাগবে-আসিফ নজরুল পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ নির্দেশনা অনলাইনেও নিষিদ্ধ হচ্ছে আ’লীগ, বন্ধ সব পেজ ৭৮ জনকে পুশইন ভারতের নৌবাহিনীর আওয়ামী লীগকে স্থায়ী নিষিদ্ধসহ ৩ দাবি তীব্র তাপদাহে দুর্বিষহ জনজীবন
সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ অনুমোদন

সন্ত্রাসে জড়িত সংগঠনের কার্যক্রম ও ব্যক্তি নিষিদ্ধ

  • আপলোড সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০৪:০৮:২০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০৪:০৮:২০ অপরাহ্ন
সন্ত্রাসে জড়িত সংগঠনের কার্যক্রম ও ব্যক্তি নিষিদ্ধ
আ’লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে নানা প্রতিক্রিয়া * গেজেট প্রকাশের পরেই আ’লীগের নিবন্ধন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেবে সিইসি * সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক, বাসায় ফিরে যান : হাসনাত আবদুল্লাহ * আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না : কাদের সিদ্দিকী * নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম ঢাকা রেঞ্জে চলবে না : ডিএমপি * আ’লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আশা করছি না : শফিকুল আলম * নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় : বাসদ সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে এমন ব্যক্তি বা সত্তা (সংগঠন) এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। আজ সোমবার সংশোধনীটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, কতিপয় সন্ত্রাসী কার্য প্রতিরোধ এবং উহাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার নিমিত্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রয়েছে মর্মে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে এই আইনে কোনো সত্তার (সংগঠনের) কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই। এ বিষয়টি স্পষ্টকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হেতু সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গেজেট প্রকাশের পরই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। রোববার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান সিইসি। ?তিনি জানান, গেজেট প্রকাশের পরেই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বাংলাদেশের স্পিরিট বুঝেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সোমবার গেজেট হলে সোমবারই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ সময় সিইসি আরো বলেন, সরকারের গেজেট প্রকাশের পরেই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। গেজেট প্রকাশ হলে আমরা নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবো। এ বিষয়ে ?কমিশনের সবার সঙ্গে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে এমন ব্যক্তি বা সত্তার এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এ খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। সংশোধনীটি সোমবার অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে বলে সভায় জানানো হয়েছে। বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ এবং তাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণে কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে বর্তমান আইনে কোনো সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো বিধান নেই। বিষয়টি স্পষ্ট করাসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে ওই আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। গতকাল রোববার ভোর পৌনে ৪টায় শাহবাগ মঞ্চে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সোমবার প্রজ্ঞাপন হবে এবং সেই প্রজ্ঞাপন নিয়ে আমরা আনন্দ মিছিল করবো। আজকে আপনারা বাসায় ফিরে যান। প্রজ্ঞাপন জারি হলে আগামী কর্মসূচি আমরা জানিয়ে দেব। তিনি বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে সরকারের দেয়া ৩০ দিন সময়ের ব্যাপারে আমরা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কর্মসূচি নেবো। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনও কার্যক্রম ঢাকা রেঞ্জে চলবে না। কেউ নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। রোববার সকালে, সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অপরাধী বা অধীনস্থ পুলিশের কোনো অপরাধ হলে, তা সরাসরি শুনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, টক টু ডিআইজি নামে একটা মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে যেকোন তথ্য দেয়া ও ডিআইজির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে। এক্ষেত্রে তথ্যদাতার নাম গোপন থাকবে বলেও জানান তিনি। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয়েছে, জনআকাক্সক্ষা ধারণে ব্যর্থ হলে যেকোনো দলের পরিণতি খারাপ হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। আর আইনজীবীরা বলছেন, বিশ্বে বহু দল নিষিদ্ধের ঘটনা রয়েছে। আইন মেনে এটা করতে কোনো সমস্যা নেই। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো এসব বর্বরতা সামনে এনেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মাঠে নামে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য নামের প্ল্যাটফর্ম। এসব সহিংসতার সাক্ষী এখানকার মানুষ কিন্তু বিষয়টি এখনও বিচারাধীন রয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে এবং সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ কী পরিমাণ দমন-পীড়ন চালিয়েছে, গেল দেড় দশকের শাসনামলে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসহ বিভিন্ন সংস্থায় বিচার ও তদন্ত চলছে। তবে জাতিসংঘের এই তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনটি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে একটা দলিল হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। এর ৫ নম্বর পাতায় আছে, সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠীও অংশ নিয়েছে। এতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পূর্ণ জ্ঞান, প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও সমন্বয় ছিলো। কিন্তু এই প্রতিবেদনের সুপারিশেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার কথাও বলে হয়েছিলো। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘ তাদের রিপোর্টে যা কিছু বলেছে, তার সবই যে একটা দেশ মানবে তা তো না। তারা বলবে দলকে নিষিদ্ধ করো না, তখন বলবে, আমরা তো নিষিদ্ধ করিনি, কার্যক্রম স্থগিত করেছে। সবচেয়ে ভালো হত যদি একটা এক্সেকিউটিভ অর্ডার দিয়ে তাদের কার্যক্রম ও পলিটিক্সে অংশ নেয়া ৩টি নির্বাচনের জন্য বন্ধ করে দিত। অবশ্য রাজনীতি করতে এসে কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা কিংবা সন্ত্রাস চালানোর কারণে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ঘটনা বিশ্বে নতুন নয়। ৭৯ বছর আগে হিটলারের ন্যাশনাল সোসালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি বা সংক্ষেপে নাৎসী পার্টি এবং প্রায় একই সময়ে মুসোলিনির ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হয়েছিলো গণহত্যার অভিযোগে। তবে এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করা এটা পৃথিবীতে নতুন কিছু না। আওয়ামী লীগও প্রচুর সংঘকে এর আগে সন্ত্রাস দমন আইনে ২ ধারায় নিষিদ্ধ করেছে, জামায়াত ইসলামীকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। যদিও নির্বাহী আদেশে একটা দলকে নিষিদ্ধ করা জায়েজ কি না, এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নিজের করা ফাঁদে নিজেই পড়েছে। এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভির হাসান জোহা বলেন, প্রচলিত আইনে কোনো নিষিদ্ধ দল এবং জনগোষ্ঠী ফিজিক্যাল এবং সাইবার স্পেসে কার্যক্রম চালাতে পারবে না। যদি চালায়, তাহলে তাদের শনাক্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করা ও বিচার নির্বিঘ্ন করতে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনপি আনন্দিত বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা আনন্দিত যে, বিলম্বে হলেও গতরাতে অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসীবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে ফ্যাসীবাদী দল আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গে যুক্ত সকল সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ তাদের ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ফ্যাসীবাদের পতনের জন্য গুম, খুন, জেল, জুলুম সহ্য করেও অব্যাহত লড়াই করেছে। তাদের সেই দাবি এখনো অর্জিত হয়নি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিও ক্রমাগত উপেক্ষিত হওয়ায় জনমনে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একইকথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে এই দাবিটা (দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার) লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যায় না মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ কচুপাতার পানি না, সেটা সিদ্ধ হবে না নিষিদ্ধ হবে, রায় দেয়ার মালিক জনগণ। রোববার দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ছাতীহাটি গ্রামে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মাওলানা ভাসানীর তৈরি করা দল, বঙ্গবন্ধুর লালন-পালনে বড় হওয়া দল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেয়া দলকে কোনো পরিষদের সিদ্ধান্তে নিষিদ্ধ করা যায় না। কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হবে, আইনের বিধানে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিও পাবে। তবে দলকে নিষিদ্ধ করা জনগণের অনুমোদা ছাড়া সম্ভব না। এদিকে অর্ন্তবর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার নিজের ঘোষণা অনুযায়ী গরু কোরবানি করে এলাকাবাসীকে বিরিয়ানি খাইয়েছেন নেত্রকোনার ইসলামি বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী। নিজ এলাকা নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা গ্রামে রোববার বিকাল ৩টার দিকে স্থানীয় মারকাজুল সাহাবুদ্দিন আল ইসলামী মাদ্রাসার সামনে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্নার ব্যবস্থা করেন তিনি। এ সময় রফিকুল ইসলাম মাদানী অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্টের বিচার দাবি করেন। সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। দলটি বলছে, এ ধরনের সিদ্ধান্তে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সহানুভূতি তৈরি করতে পারে। গতকাল রোববার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এসব কথা বলেন। বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১৫ বছরের শাসনে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে এবং গুম-খুনসহ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। এখনও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জুলাই গণহত্যাসহ তাদের বিগত কর্মকাণ্ডের জন্য ন্যূনতম অনুশোচনাও নেই। তবে সন্ত্রাস দমন আইন বা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো অগণতান্ত্রিক আইনের মাধ্যমে নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পথে প্রতিবন্ধক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করে জুলাই গণহত্যাসহ সকল অপরাধের বিচারের মাধ্যমে সঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। তিনি বলেন, একাত্তরের গণহত্যার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর বিচার জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি হলেও কোনো সরকার এ উদ্যোগ নেয়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে ব্যবহার করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে তৎকালীন সরকারও সন্ত্রাস দমন আইনে নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে জনগণের মনোযোগ ভিন্ন দিকে নেয়ার চেষ্টা করেছিল তবে সফল হয়নি। বর্তমান সরকারের কাছেও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধ এবং মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার দায়ে জামায়াতেরও বিচার দাবি করছি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে যারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সেøøাগান দিয়েছে, তাদেরকেও চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন এবং দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু আমরা সরকারের দিক থেকে আস্থাশীল কোনও ভূমিকা লক্ষ্য করছি না। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের সঙ্গে কথিত মানবিক করিডোর তৈরি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাতে তুলে দেয়ার মতো জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের মত অনির্বাচিত সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স